পাঠকের পাতার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালন উপলক্ষে কারাগারে রোজনামচা ও কবিতা পাঠ
কুইন্স লাইব্রেরি হলিস শাখার'পাঠকের পাতা'র আয়োজনে ১৮ মার্চ শনিবার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে ও তাঁর রচিত বিখ্যাত দলীল কারাকাগারের রোজনমচা নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান ও কবিতা পাঠ। পাঠকের পাতা বই পড়া এবং তার উপর আলোচনার একটি সংগঠন। যেখানে প্রতি মাসে একটি করে বই বাছাই করে তার উপর আলোচনা করা হয়। এই সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন জায়াগার সাহিত্যের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। করোনা মহামারি শুরু হলে বেশ কিছুদিন পাঠকের পাতার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। যাচ্ছে। ২০২০ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানরচিত 'কারাগারের রোজনামচা' বইটি নিয়ে আলোচনা করার কথা ছিল। কিন্তু কোভিডের কারণে সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ার তা আর সম্ভব হয়নি।
এবারের আলোচনায় মুল আলোচক ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা একুশে পদক প্রাপ্ত লেখক গবেষক ড.নুরুন নবী। তিনি তাঁর বক্তব্যে কারাগারে রোজনামচা ও বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরেন। ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল জেল-জীবনচিত্র।বঙ্গবন্ধু নিজেই একটি রোজনামায় তাঁর এই জেল স্মৃতির কথা লিখে রেখেছিলেন এবং এর নাম দিয়েছিলেন 'থালাবাটি কম্বল / জেলখানার সম্বল'।
বঙ্গবন্ধুর জেলজীবন, জেল-যন্ত্রণা, কয়েদিদের অজানা কথা, অপরাধীদের কথা, কেন তারা এইঅপরাধ জগতে পা দিয়েছিল, তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কারাগারে আওয়ামীলীগনেতা-কর্মীদের দুঃখ-দুর্দশা, গণমাধ্যমের অবস্থা, শাসকগোষ্ঠীর নির্মম নির্যাতন, ৬ দফার আবেগকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা, ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা, প্রকৃতি প্রেম, পিতৃ-মাতৃভক্তি, কারাগারে পাগলদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না তুলে ধরেছেন। কবি কাজী জহিরুল ইসলাম বইটিকে সাহিত্যে ধারায় না দেখে এটিকে বঙ্গবন্ধুর একটি কারাবাস জীবনের অত্যন্ত রসবোধসম্পন্ন দলীল হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষের একবার হলেও বইটি পড়বার তাগিদ অনুভব করেন। লেখক গবেষক ওবায়দুল্লাহ মামুন উল্লেখ করেন, কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বসেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলার পরিকল্পনা করেছিলেন ।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের ১৪টি বছর কারাগারে ছিলেন। তিনি ১৯৩৮ সালে প্রথম কারাগারে যান। এরপর ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত তিনি পাঁচ দিন কারাগারে ছিলেন।একই বছর ১১ সেপ্টেম্বর আটক হয়ে মুক্তি পান ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি। এ দফায় তিনি ১৩২ দিন কারাভোগ করেন। এরপর ১৯৪৯ সালের ১৯ এপ্রিল আবারও কারাগারে গিয়ে ৮০দিন কারাভোগ করে মুক্তি পান ২৮ জুন। ওই দফায় তিনি ২৭ দিন কারাভোগ করেন। একইবছরের ১৯৪৯ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৩ দিন এবং ১৯৫০ সালের ১জানুয়ারি থেকে ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি টানা ৭৮৭ দিন কারাগারে ছিলেন।
প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক সমাজকর্মী সৈয়দ ফজলুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর লেখা‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ শেষ করেই ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইটা পড়তে শুরু করেছিলাম। কিন্তু এই বইটা যেন আর শেষ হতেই চাইত না। প্রতিটি পাতা পড়ি আর মনটা ভীষণ খারাপ হতে থাকে। বইটা আমাদের ইতিহাসের এক অনবদ্য দলিল। বইটার রাজনৈতিক মূল্য অপরিসীম।পাকিস্তানের শোষকগোষ্ঠীর নিপীড়ন নির্যাতনের এক জীবন্ত সাক্ষী এই বইটা। কুইন্স লাইব্রেরীর হলিস শাখার ম্যানেজার, লেখক ও গবেষক আব্দুল্লাহ জাহিদ উল্লেখ করেন, বইয়ে অনেক বিস্তৃতভাবে পূর্ব বাংলার সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই বিষয়ের ওপর বহুল গবেষণা হওয়া জরুরি বলে আমি মনে করি। এরপর বঙ্গবন্ধুর জীবন ও দর্শন নিয়ে একে একে বক্তব্য রাখেন শফিউল আজম মুমিন, খান শওকত, এস এম মোজাম্মেলসহ অনেকেই।
পরবর্তী পর্বে স্বাধীনতা কবিতা পাঠের আসরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নিজের লেখা অসাধারণ একটি কবিতা পাঠ করেন শুনান কবি কাজী জহিরুল ইসলাম। লুৎফর রহমান রিটনের লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন শাহানা বেগম , এস এম মোজাম্মেল ও রওশন হক।অনুষ্ঠানের পুরোটা সময় জুড়ে সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন ড. নুরুন নবী, শাহানা বেগম, কাজী জহিরুল ইসলাম, মুক্তি জহীর, আব্দুল্লাহ জাহিদ, শফিউল আজম মুমিন,খান শওকত, এসএম মোজাম্মেল, সৈয়দ ফজলুর রহমান,ওবাইদুললাহ মামুন।
আইটি ল্যাব সলিউশন্স লি.