লেখক ও পাঠকের যূথবদ্ধ সম্মিলন

প্রকাশিত: ২৪ মার্চ, ২০২৩ ১২:০৪ (মঙ্গলবার)
লেখক ও পাঠকের যূথবদ্ধ সম্মিলন

palonyগুহা যুগে গুহার দেয়ালে ছবি আঁকত মানুষ, লিখে রাখত তাদের সাংকেতিক ভাষা৷ তারপর প্রস্তর যুগে প্রস্তরে, তাম্রযুগে তাম্রলিপিতে লিখত তাদের মনের কথা ৷ এখনও জাদুঘরে রক্ষিত আছে পশুর চামড়া, গাছের বল্কলে বা পাতায় লিখিত পাণ্ডুলিপি৷ আমরা এখন লিখছি সাদা কাগজের বুকে, প্রকাশ করছি গ্রন্থাগারে আমাদের সুখ-দুঃখগাথা৷ মোদ্দা কথা, মানুষের মনের ভাবনা ভাষার অক্ষরে প্রকাশের আকুতি অতি প্রাচীন৷ এই আকুতি থামবার নয় কখনও যতদিন মানবসভ্যতা টিকে থাকবে৷ আর মানুষই পারবে তার সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতার দলিল রেখে যেতে চির ধ্বংসের আগ পর্যন্ত৷

আমি লিখি৷ খুব ছোট্টকাল থেকেই লিখি৷ শুরু করেছিলাম ছড়া দিয়ে৷ তারপর কবিতা, গান, গল্প এরপর উপন্যাস, প্রবন্ধ কিংবা টুকরো গাথা৷ আজও থেমে নেই লেখনীর কলম৷ কলমের পর টাইপরাইটার, কম্পিউটার, আইপ্যাড, ট্যাবলেট, সেলফোন তুলে নিয়েছি হাতে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে লেখালেখি৷ লিখছি নানান ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়৷ ব্লগ, ওয়ার্ডপ্রেস, ওয়েবজিন, অনলাইন পত্রিকা, ফেইসবুক কত না বিশাল লেখনীর মাঠ! এখন আর পোস্ট অফিসে যেতে হয় না লেখা পাঠাতে৷ সম্পাদক বরাবরে ইমেইল বা ফেইসবুকে আপলোডই যথেষ্ট৷ একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা

দিবস, বাংলা এখন আন্তর্জাতিক ভাষা৷ পৃথিবীর সব দেশেই এখন বাংলাভাষীদের বসবাস৷

আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি লেখা প্রকাশ পেয়েছে আশির দশকে কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের সাহসী সময়ে৷ ঐ বয়সেই লিখেছি জাতীয় দৈনিকে, সাপ্তাহিক পত্রিকায়, সাহিত্যের কাগজে ও লিটলম্যাগে৷ তারপর নব্বইয়ের দশকে লিখেছি গান, হয়েছি তালিকাভুক্ত৷ ক্যাসেটের যুগ থেকে সিডি, সিডি থেকে অনলাইন এখনও চলছে লেখা৷ তবে একবার শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হলে ধীরে ধীরে যোগাযোগও যায় কমে৷ তাই বই প্রকাশে আমার গতি খুব ধীর৷ ২০০৪ সাল থেকে আজ অব্দি মাত্র আটটি বই প্রকাশ পেয়েছে৷ তবে অনেক পত্রিকা ও অনলাইনে ছড়িয়ে আছে আমার অসংখ্য লেখা গান ও কবিতা৷

২০১০ সালে কানাডায় প্রবাসী হবার পর আমার লেখা নিয়মিত প্রকাশ হতো এখানকার কমিউনিটি অর্গানাইজেশনের বার্ষিক ম্যাগাজিনে। কিছু কবি বন্ধুরা তাদের লিটলম্যাগের জন্যও নিত আমার লেখা৷ তবে লেখা প্রকাশে আমার প্রধান মাধ্যম ছিল ফেইসবুক, এখনও আছে৷ মনে মনে ভাবতাম যদি ছাপার অক্ষরে আমার লেখা বা বই প্রকাশ হতো! তাই যদি সত্যি বলি তবে ‘প্রথম আলো’ উত্তর আমেরিকা সংস্করণ আমার প্রবাস জীবনে প্রথম ভালোলাগা, ভালোবাসার পত্রিকা৷ কানাডার এডমন্টন শহরে বসবাসের কারণে আমার অনলাইন সংস্করণ পড়া হয় শুধু৷ প্রবাসে বসেও নিয়মিত পাই দেশের খবর৷ আর উত্তর আমেরিকার, বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন খবর তো আছেই৷ প্রবাস জীবনে আমার হৃদয়ে ছাপার অক্ষরে কালির আঁচড় গড়ে দেয় ‘প্রথম আলো’ উত্তর আমেরিকা সংস্করণ৷

একটি নির্দিষ্ট পত্রিকায় চার বছর লেখালেখি একেবারে কম সময় নয়৷ নিয়মিত পড়ি ‘প্রথম আলো’ উত্তর আমেরিকা সংস্করণ৷ খুঁজে পাই কাঙ্ক্ষিত খবর, কাঙ্ক্ষিত লেখা৷ পড়ি বিভিন্ন সাংবাদিকদের ফিচার, কবির কবিতা, গল্পকারের গল্প, প্রাবন্ধিকের নজরকাড়া

প্রবন্ধ৷ নিজেকে কখনও মনে হয় না দেশ থেকে দূরে থেকেও মূলধারার লেখকদের চেয়ে আমরা কম পারি৷ আর সেই কাজটাই করে যাচ্ছে ও ছায়াতল হচ্ছে ‘প্রথম আলো’ উত্তর আমেরিকা৷ এই পত্রিকার ছায়াতলে বেড়ে উঠছে নতুন লেখক, কবি ও সাংবাদিক৷ পরিপক্ক হচ্ছে লেখকদের হাত, সম্পাদকদের নিখুঁত সম্পাদনা৷ এ তো সেই একমাত্র পত্রিকা যা গড়ে দিচ্ছে হৃদয়ের সেতুবন্ধন আর আয়োজন করছে লেখক ও পাঠকের যূথবদ্ধ সম্মিলন! নিজেকে মনে হচ্ছে আমিও এই পরিবারের সদস্য৷ ৭ম বর্ষে পদার্পণের এই দিনে আমি ‘প্রথম আলো’ উত্তর আমেরিকা সংস্করণের উত্তরোত্তর বহুল প্রচার ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি৷ 

সম্পাদক ও প্রকাশক: মোতাহার হোসেন

মোবাইল: ০১৩৩২-৮৪৫৬৯৯

তথ্য ও প্রযুক্তি সহযোগী - আইটি ল্যাব সলিউশন্স লি.