এসো হে বৈশাখ এসো এসো

প্রকাশিত: ০৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০৭:৪৫ (মঙ্গলবার)
এসো হে বৈশাখ এসো এসো

 পয়লা বৈশাখ। নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর জন্য চারদিকে সাজো সাজো রব। বাঙালির সর্বজনীন লোক উৎসব পয়লা বৈশাখ উদযাপন। পুরোনো বছরের ভুল-ত্রুটি -ব্যর্থতা ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির কামনায় মানুষ বুক বাঁধে। এখন যেভাবে পয়লা বৈশাখ সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, এক সময় তেমনটি ছিল না। তখন নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ ঋতুধর্মী উৎসব হিসাবে পালিত হত। কারণ তার সঙ্গে কৃষিকাজে জড়িত ছিল। বাংলা নববর্ষ পালনের সুচনা হয় মূঘল সম্রাট আকবরের আমলে। কৃষিকাজের সুবিধার্থে আকবর ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০/১১ মার্চ থেকে বাংলা সন প্রবর্তন করেন এবং তা কার্যকর হয় তাঁর সিংহাসন আরোহরণের সময় অর্থাৎ ৫ নভেম্বর ১৫৫৬ থেকে। নতুন সনটি প্রথমে ফসলি সন নামে পরিচিত ছিল, পরে অবশ্য তার বঙ্গাব্দ নামকরণ করা হয়।   সে সময় বাংলার কৃষকেরা চৈত্রমাসের শেষদিন জমিদার, তালুকদার, মিরাশদার ও অন্যান্য ভূ-স্বামীদের খাজনা পরিশোধ করত। ভূ-স্বামীরা পরদিন নতুন বর্ষে তাদের মিষ্টিমুখ করাতেন। কোনও কোনও স্থানে মেলারও আয়োজন করা হত। এই মেলাকে কেন্দ্র করে বছরের প্রথমদিনে প্রিয়জনের সঙ্গে মিলন ঘটত ও শুভাশুভ বিনিময় হত।   বাংলা নববর্ষের আর একটি উল্লেখযোগ্য উৎসব হল ব্যবসায়ী ও দোকানিদের হালখাতা উৎসব। গ্রাম-শহর সবত্র ব্যবসায়ীরা পুরোনো হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খোলেন। ভারী রকমের লাল হালখাতা এইদিন শোভা পায় ব্যবসায়ীদের দোকান-গদিতে। ব্যবসায়ীরা হালখাতা উৎসব উদযাপনে ক্রেতা খরিদ্দারদের আমন্ত্রণ করে মিষ্টিমুখ করান। এই অনুষ্ঠান আজও সাড়ম্বরে বাঙালিরা পালন করে থাকেন।   পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষে ঘরে ঘরে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং প্রতিবেশীদের আগমন ঘটে। বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠরা কনিষ্ঠদের নতুন জামা-কাপড় উপহার দিয়ে থাকেন। ছোটোরা বয়োজ্যেষ্ঠদের সালাম করে দোয়া নিয়ে থাকে। নববর্ষকে আরও জাঁকজমক ও হৃদগয়গ্রাহী করে তোলে বৈশাখী মেলা। কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায় কোনও প্রাচীন বটবৃক্ষের নিচে বিস্তৃত জায়গায় বছরের প্রথম দিনে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। মেলাতে মূলত মণিহারি দোকান, কুটির শিল্পজাত, মৃৎশিল্পজাত ও হস্তশিল্প দ্রব্যের বিপণন থাকে। বিভিন্ন প্রকার মিষ্টিজাত দ্রব্য যেমন জিলিপি, রসগোল্লা, ক্ষীরের সন্দেশ, আইসক্রিম প্রভৃতির বৈচিত্র্যময় সমারোহ থাকে মেলায়। মেলায় বিনোদনেরও ব্যবস্থা থাকে। যাত্রা, জারিগান, পালাগান, কবিগান ইত্যাদি এবং বিভিন্ন লোকসংগীত পরিবেশন করা হয়। বাংলা নববর্ষ আমাদের জীবনে শুধুমাত্র একটি উৎসব নয়, এটি আমাদের চেতনায় বাসা বেঁধে খাকা নিরবচ্ছিন্ন এক ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ। বাঙালি সংস্কৃতির এক অনন্য প্রকাশ বাংলা নববর্ষ উদযাপন। এই দিনে পুরোনো ব্যথা-ব্যর্থতা, গ্লানি-হতাশা ভুলে নতুনকে বরণের যেমন উদ্যমতা দেখা যায় বাঙালিদের মধ্যে ঠিক তেমনি বহিরাগত

অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ যাতে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে কলুষিত ও গ্রাস করতে না পারে তার জন্য শপথ নিতে শেখায় এই নববর্ষ। বাংলা নববর্ষ আমাদের সংস্কৃতির শিকড়। গভীরে প্রোথিত এই শিকড়কে উজ্জীবিত রাখার দায়িত্ব বর্তায় নতুন প্রজন্মের ওপর। আমাদের নিজেদের সংস্কৃতিকে সামনের দিকে অনন্তকালের জন্য বহন করে নেবার শক্তি অর্জন করতে হবে। আর তখনই কবিগুরুর বর্ষবরণ গান ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো এর গুঞ্জরণে চরম সার্থকতা খুঁজে পাবে বাঙালি জীবন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: মোতাহার হোসেন

মোবাইল: ০১৩৩২-৮৪৫৬৯৯

তথ্য ও প্রযুক্তি সহযোগী - আইটি ল্যাব সলিউশন্স লি.