https://voiceofpeople24.com/

3641

whole-country

রাজশাহী টু জেএফকে 

প্রকাশিত : ২৪ মার্চ ২০২৩ ১১:৫২ | আপডেট : ৩০ নভেম্বর -০০০১ ০০:০০

Ovimotআনান্দ আর বেদনা দুটিই হয়ে গিয়েছিল একাকার। চোখের পানি বের হয়ে আসছে কারন একটা অচেনা অজানা দেশে যাচ্ছি,  আবার আনান্দ ও পাচ্ছি কারণ স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় ডিবি লটারি  পেয়ে যাচ্ছি। অনেক লোক এসেছে আমাকে রাজশাহী এয়ারপোটে তুলে দিতে; বিশেষ করে আমার বন্ধু, বান্ধবী ও আমার শিক্ষকেরা ও আত্নীয়-স্বজনেরা। বাড়ি থেকে বিদায় নেয়ার সময় কি যে কান্নাকাটি করি,বিশেষ করে যখন অসুস্থ বাবার কাছে বিদায় নিতে যাই বাবার দুই চোখ বেয়ে পড়তে লাগল। বাবার পাশে অনেকক্ষণ বসে থাকি। বাবার কান্না দেখে আমার ও কান্না আসতে লাগল। কোনোভাবে আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারছি না। রোমাল দিয়ে চোখের পানি মুছি। আত্নীয়-স্বজন গ্রামবাসী এসেছে বিদায় জানাতে। তাদের ছেড়ে মনটা আর আসতে চায় না। সবার কাছ থেকে এক এক করে বিদায় নিচ্ছি। মনটা কেমন যে করছে। যে ঘরে থাকতাম ছুটে যাই সেই ঘরে। কি যে এক মায়া সৃষ্টি হতে লাগল। কোথায় যাচ্ছি আবার যে কবে ফিরে আসব? যেদিকে যাচ্ছি যা দেখছি তাতেই মায়া সৃষ্টি হচ্ছে। সকালে সকালে মাইক্রো এসে পৌঁছে গেল। আমার লাগেজ ও প্রয়োজনীর জিনিস মাইক্রোতে তোলা হলো। মা খাবার বেড়ে ডাকছে। কিন্তু কিছুতেই আর মন খেতে চাচ্ছে না। মা আমার পিছে পিছে ঘুরছে। কিছু না খেতে চাইলেও অনেক কিছু খেতে বলছে। মা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কাপড়ের আঁচল দিয়ে মাঝে মাঝে মুখ মুছে দিচ্ছে। মাইকো তে সবাই বসে আছে। আমি উঠলে মাইকো আর দেরি না করে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দিবে। রাজশাহীতে আমরা খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেলাম। এয়ারপোর্টে দেখি আমার বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক, আত্মীয়-স্বজন অনেকে গিয়ে বসে আছে। সবাইকে দেখে মনটা আনান্দে ভরে গেল। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু ও বান্ধবীদের দেখে আমার কি যে আনান্দ লেগেছিল। ওদের সাথে বিদায়ের আগ পর্যন্ত মজা করে সময় পার করেছিলাম। ওরা কতভাবে আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে । আমার স্যারদের এয়ারপোটে পেয়ে আমার আনান্দ গেল আরো বেড়ে।

স্যারেরা বলছে বিদেশে ভালভাবে থেকো। সব সময় শরীরের প্রতি যত্ন নিও। সবার সাথে খাপ খাইয়া চলার চেষ্টা করিও।

আত্নীয়-স্বজন সবার সাথেই বসে কথা বলছি। সবাই আমাকে নানাভাব্ সান্ত্বনা দিচ্ছে  ইতিমধ্যে হঠাৎ কোথায় থেকে প্লেন এসে চিল পাখির মত শো করে নিচে নেমে পড়ল। এটা দেখে আমার আনান্দিত মন হঠাৎ বেদনায় ভরে গেল।এখন সবাই কে ছেড়ে আমাকে যেতে হবে। জীবনের এটাই প্রথম প্লেন ভ্রমণ। প্লেন আসার পর আমার লাগেজ প্লেনে তোলা হল। আমাকে প্লেনে উঠতে বলা হলো। আমি সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে প্লেনের দিকে যাই। কি যে খারাপ লাগতে লাগল। প্লেনে উঠলাম। চারপাশে দেখতে পেলাম বাসের মত সিট। বিমান বালারা আমাকে সিট দেখা দিল। আমি গিয়ে আমার সিটে বসলাম। এই প্রথম প্লেনে উঠছি তাই শুধু চারিদিকে তাকিয়ে দেখছি। বিমান বালাদের পরীর মত মনে হচ্ছে। তারা আমাকে স্যার বলে সম্বোধন করছে। বলছে আমি কিছু খেতে চাই কিনা। তারা আমাকে চা বিস্কুট দিল আমি খেতে লাগলাম। হঠাৎ প্লেন মুভ করতে লাগল আর বিমান বালারা আমাকে সিট বেল্ট পড়তে বলল। আমি সিট বেল্ট পড়লাম। হঠাৎ করেই প্লেন শো করে ওপরে উঠে গেল। আমি প্লেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাঁকা রইলাম। গাছপালা ঘরবাড়ি একেবারে ছোট ছোট পিঁপড়ার মত মনে হলো। পরে জানালা দিয়ে নিচে তাকালে কোন কিছু দৃষ্টিগোচর হলো না। প্লেনের শোঁ শোঁ শব্দ হচ্ছে আর প্লেন মাঝে মাঝে ঝাঁকি মারছে। এক ঘণ্টার আগেই আমরা সৈয়দপুর এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছে গেলাম। সৈয়দপুর এয়ারপোর্টে  প্রায় একঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে আমরা আবার শহীদ দিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে হওয়া হই।

প্রথম বিমান বাংলাদেশে ভ্রমণ বেশ ভালোই লাগছে। আমার কাছে বিমানবালারা এয়ারফোন দিলো এবং বলল ইচ্ছা করলে আমি গান শুনতে বা মুভি বা নাটক দেখতে পারি। কিভাবে দেখতে হয় তারা দেখা দিল। আমি কানে এয়ারফোন লাগায়ে গান শুনতে লাগলাম। মাত্র কয়েকটা গান শুনে একটা নাটক দেখতেছি ইতিমধ্যে জানানো হলো আমরা শহীদ দিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কিছুক্ষণের মধ্যে অবতরণ করব। ওমা বাইরে তাকিয়ে দেখি ঢাকা শহরের বিল্ডিং। প্লেন যখন নামল আমাদের সিট বেল্ট পরতে বলল। আমরা খুব তাড়াতাড়ি শো করে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলাম।

জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাজশাহী থেকে বাংলাদেশ বিমানে ছয়-সাত ঘণ্টা ফ্লাইটের আগেই চলে আসি। এই সময়টা এয়ারপোর্টের মধ্যে অপেক্ষা করছি। কত কিছু যে মনে পড়ছে, আর কতকিছু যে ভাবছি। কত কিছু যে এয়ারপোর্টে দেখছি। কেউ হাসছে আবার কেউ কাঁদছে। কত লোক যে বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে আবার কত লোক যে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। আমি এক জায়গায় চুপ করে বসে আছি। এয়ারপোর্টের মধ্যে যে সময়টা ছিলাম কি যে অস্থিরভাবে কাটাইছিলাম। হঠাৎ দেখি আমার ফ্লাইট নং স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে। লাগেজ নিয়ে বোর্ডিং পাসের কাজ শেষ করলাম। এরপর সবকিছু চেকআপ করে চলে গেলাম প্লেনের কাছে। বোর্ডিং পাস দেখে সিটে বসে পড়লাম ।

প্লেনের ভেতর স্ক্রিনে লেখা উঠছে মাটি ছাড়া চার হাজার ফুট 

উপর দিয়ে প্লেন টা উড়বে। মাঝে মাঝে দোয়া দরুদ স্ক্রিনে উঠছে আর তেলওয়াত হচ্ছে। ভয় হতে লাগল এত বড় ভ্রমণ করব যদি কোন বিপদ হয় সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউ নাই। কত ভয় ভীতি যে কাজ করছে। রাতে প্লেন উড়ল। আমরা পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে দুবাই এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছে গেলাম। কি সুন্দর দুবাই এয়ারপোর্ট। কত প্লেন দেখলাম এয়ারপোর্টে । আমরা অবশ্য প্লেনে দুই ঘণ্টা বসে ছিলাম। এরপর দুবাই থেকে রওনা দিলাম বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে। আমরা বেলজিয়ামের সময় রাতে ব্রাসেলসে ল্যান্ড  করলাম। মিটি  মিটি আলো জ্বলছে এয়ারপোর্টে। আমরা  ল্যান্ড  করে মাত্র এক ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করি। এরপর আমাদের মূল টার্গেট নিউইয়র্কে যাত্রা শুরু করি। আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিব। ভেতরে কি যে একটা ভয় কাজ করছে। না জানি এবার কি হয়। অনেক বড় ভ্রমণ। সময় আর শেষ হয় না। কত ঘুমানোর চেষ্টা করি। কিন্তু কোনভাবে আর ঘুম ধরে না। 

স্ক্রিনে সময় দেখা যাচ্ছে । আমরা কত ঘণ্টা আচ্ছি আর কত ঘণ্টা আছ সব দেখা যাচ্ছে। প্লেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে ধোঁয়া ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না।  প্লেন একবার নিচের দিকে যাচ্ছে আবার উপরের দিকে উঠছে। বিমান বালারা আমাদের সিট বেল্ট পড়তে বলছে। গা কাঁপছে। মাঝে মাঝেই সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছি। যার সাথে দেখা হচ্ছে তার সাথে প্লেনে কথা বলসি। মাঝে মাঝেই সময় দেখি। দেখি আর মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে আমরা জেএফকে  অর্থাৎ জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্ট নিউইয়র্কে পৌঁছে যাব। মনের মধ্যে একটু আনান্দ কাজ করতে লাগল। অবশেষে এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করলাম।

এই তো চলে এসেছি। প্লেন থেকে নেমে ইমিগ্রেশনের জন্য লাইনে দাঁড়ালাম । অনেক বড় লাইন । ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ হলে লাগেজ নিয়ে বাইরে বের হলাম। মনে হলো ঠাণ্ডা না বরফ। একটা ট্যাক্সি নিয়ে আমার পরিচিত এক ভাইয়ের বাসায় গিয়ে উঠলাম। গোসল করে খাওয়া-দাওয়া করে একটা বড় ঘুম দিলাম। পরে দেশে সবার সাথে কল করে কথা বললাম আমি ছহি সালামতে আমেরিকায় এসে পৌঁছেছি।