1
https://voiceofpeople24.com/
3821
tourism
প্রকাশিত : ০৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৪০ | আপডেট : ৩০ নভেম্বর -০০০১ ০০:০০
'হাশরের দিন বলিবেন খোদা হে আদম সন্তান, তুমি মোরে সেবা কর নাই যবে ছিনু রোগে অজ্ঞান/ মানুষ বলিবে তুমি প্রভু করতার, আমরা কেমনে লইব তোমার পরিচর্যার ভার?/বলিবেন খোদা দেখনি মানুষ কেঁদেছে রোগের ঘরে /তারই শুশ্রূষা করিলে তুমি যে সেথায় পাইতে মোরে।' কবিতাটি কবি আবদুল কাদিরের 'মানুষের সেবা' কবিতার প্রথমে উল্লেখ করেছেন। কবির ভাষায় যে ব্যক্তি রোগীর সেবা করলো সে আল্লাহর সেবা করলো। যারা রোগীকে অবহেলা করলো তারা আল্লাহকে অবহেলা করলো।
বিভিন্ন কারণে মানুষ অসুস্থ হতেই পারে। আমাদের আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশী অসুস্থ হলে তাদের জন্য কিছু করণীয় রয়েছে। অসুস্থ ব্যক্তিদের দেখতে যাওয়া, তাদের সেবা শুশ্রূষা করা, তাদের জন্য উপযুক্ত খাদ্য সামগ্রী নিয়ে যাওয়া এবং তাদের খোঁজ-খবর নেয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনন্য সুন্নাত।
রোগীর সেবা করা শ্রেষ্ঠ ইবাদত। এজন্য শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাদের আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন। হাদিসের মাধ্যমে দেখতে পাই, একজন মুসলমানের কাছে আরেকজন মুসলমানের ছয়টি হক রয়েছে। তার মধ্যে প্রথমটি হলো,কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া। সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'তোমরা রোগী দেখতে যাও এবং জানাজায় অংশগ্রহণ করো, কেননা তা তোমাদেরকে পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। একজন অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সান্তনার বাণী শোনালে, খোঁজ-খবর নিলে, একটু সেবাযত্ন করলে তার দুশ্চিন্তা লাঘব হয়। অসুস্থ ব্যক্তির সেবা-যত্ন করা, তার খোঁজ-খবর নেওয়া ও সান্তনার বাণী শোনানো হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত।
এছাড়াও রোগীর সেবা-যত্নে রয়েছে মহান প্রভুর সন্তুষ্টি।
যারা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণে অসুস্থ ব্যক্তিদের দেখতে যায়, তার জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন। হাদিসে এসেছে-হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি সকালে কোনো মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, সত্তর হাজার ফেরেশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য নেক দোয়া করতে থাকেন। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় কোনো মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, পরদিন সকাল পর্যন্ত নেক দোয়া করতে থাকেন। আর ওই ব্যক্তিকে জান্নাতের একটি বাগান দান করা হয়।’ (তিরমিজি)
রোগীকে দেখতে যাওয়া উত্তম একটি কাজ। সবসময় মনে রাখতে হবে, আমরাও যেকোন সময় অসুস্থ হতে পারি। রোগীকে দেখতে যাওয়া মানে জান্নাতে স্থান করে নেওয়া।
রোগীর সেবা-যত্ন করার মাধ্যমে আমরা সহজেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি। আমরা যখন কোন রোগীকে দেখতে যাব তখন তার ভালো কাজগুলো স্মরণ করে কথা বলতে পারি। অসুস্থ ব্যক্তির পাশে ভালো কথা বলায় রয়েছে তাদের জন্য কল্যাণ। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যখন তুমি কোনো রোগীর কাছে যাবে কিংবা মরণোন্মুখ ব্যক্তির কাছে যাবে, তখন তার সঙ্গে মঙ্গলজনক কথাবার্তা বলো। কেননা তুমি যা বল, ফেরেশতাগণ তার (ওই ভালো কথার) ওপর আমিন আমিন বলতে থাকে।’ (মুসলিম ও মিশকাত)
সেবা পাওয়া অসুস্থ ব্যক্তির অধিকার। সামর্থ্য ও সুযোগ থাকার পরও রোগীর প্রতি যদি অবহেলা করা হয়, তবে কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে রোগীর সেবা করার জন্য সঠিক জ্ঞান ও তৌফিক দান করেন।