https://voiceofpeople24.com/

3611

economy

খবরের কাগজের উচিত জনমানুষের হয়ে ওঠা, ‘প্রথম আলো’ জনমানুষের হোক

প্রকাশিত : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১১:৪২ | আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:০২

palony‘কেন লিখি’ এ বিষয়ে আমার একটা লেখা ছিলো একটা সাহিত্য সাময়িকীতে। সেখানে যা বলেছিলাম তা মূলত সাহিত্য বিষয়কে কেন্দ্র করে। কিন্তু খবরের কাগজ বা মাধ্যমে

লেখার বিষয় কিছুটা আলাদা। বিশেষ করে উপসম্পাদকীয় লেখার বিষয়টি। সাহিত্যের লেখায় একটা ‘আমি’ থাকে, ‘ব্যক্তিগত’ একেবারেই গত হয় না। কিন্তু উপসম্পাদকীয় লেখা হয় দেশের জন্য, মানুষের জন্য। সেখানে লিখতে হয় ব্যক্তিকে অতিক্রম করে। ব্যক্তিকে গত করে। কখনো বা সে লেখা দেশের সীমানাকে অতিক্রম করে। ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ এর কনসেপ্টে তা করতেই হয়।

প্রযুক্তি সারাবিশ্বের মানুষকে যূথবদ্ধ করেছে। সুতরাং লেখা সব-সময় একটা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডকে কেন্দ্র করেই হবে তেমন কথা এখন অচল। ইউক্রেনে যুদ্ধ হলে তার জের পোহাতে হয় বিশ্বের সব মানুষকে। চীনের করোনা ছড়িয়ে যায় বিশ্বব্যাপী। লেখাও তেমনি ভূখণ্ডের সীমানা অতিক্রম করে, আর তা মানুষের প্রয়োজনেই। তাই লেখার স্বাধীনতাটা ভীষণ জরুরি। ‘প্রথম আলো’ উত্তর অ্যামেরিকাতে লেখার কারণটা তাই। এখানে লেখার স্বাধীনতা রয়েছে। সম্পাদক অযথা লেখায় বা’হাত মেলেন না। বলেন না, এটা লিখতে হবে, ওটা লেখা যাবে না। ওই লেখা আমাদের নীতির সাথে যায় না। মূলত নীতি বলতে এখন রাজনীতি। সব নীতি ক্রমেই রাজনীতিতে ঠাঁই নিচ্ছে বলেই আজকে দেশের অনেক খবরের মাধ্যম মানুষের আস্থা হারাচ্ছে। এই হারানোর বিষয়টি আজ প্রকট। দৃশ্যমান এই প্রকটতা এখন আর অস্বীকার করার জো নেই।

স্বাধীন গণমাধ্যম বলতে যা বোঝায়, তার জন্য স্বাধীন মানুষ দরকার। পাওলো ফ্রেইরি বলেছিলেন, দাসত্ব থেকে মুক্তির মূল কথা হলো নিজের মানসিক দাসত্ব থেকে মুক্তি। স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য প্রয়োজন নিজের চিন্তার সীমাবদ্ধতা তথা দাসত্ব থেকে মুক্ত মানুষ। মতান্ধতা দাসত্বের অন্যতম কারণ। কোনো অন্ধ কখনো কাউকে পথ দেখাতে পারেন না। গণমাধ্যমের কাজ পথ দেখানো, আলোর পথ। সেখানের প্রধানরা অন্ধ হলে, গণমাধ্যম নিজেই অন্ধকারে পথ হারায়। অন্যকে আলোর দিশা দেখানো তখন অসম্ভব হয়ে ওঠে। আমরা ক্রমেই সেই অসম্ভবের পথে হাঁটছি। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচক দেখলেই বোঝা যায় কতটা অন্ধকার আমাদের ক্রমশ গ্রাস করছে।

রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলে আমাদের যে অহঙ্কার তা ক্রমেই ধসে যেতে বসেছে। তিনপায়া চেয়ারে বসে ভারসাম্য রক্ষা করাটা কঠিন। ঠিক তেমনি রাষ্ট্রের বেলাতেও। চতুর্থ স্তম্ভ ভেঙে গেলে কারো হয়তো মনে হতে পারে যে, যাক বাঁচা গেলো সমালোচনার হাত থেকে। বাঁচা কি সত্যিই যায়? যায় না। ইতিহাসের বিগত পাঠ তা পরিষ্কার জানিয়ে দেয়। কিন্তু ওই যে বহুল বলা কথা, ইতিহাসের পাঠ থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। তবে আমাদের শিক্ষা নেয়ার সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি। সময় ফুরোবার আগেই ঝরে পড়া শিশু না হয়ে পুনর্বার পাঠে ফিরে আসা উচিত। তাহলেই হয়তো সবার মঙ্গল।

যাকগে, শুরু করেছিলাম ‘প্রথম আলো’র বর্ষপূর্তি নিয়ে। কিন্তু অভ্যাসের দাস বলে কথা। ঢেঁকি স্বর্গে গেলে ধানই ভানে। কী আর করা। আবারও বলি, ‘প্রথম আলো’ উত্তর অ্যামেরিকাতে লিখি, লেখার জন্য জরুরি স্বাধীনতাটুকু পাই বলে। দেশেও যেসব মাধ্যমে লিখি, সেখানেও সেটুকু পাই বলেই লেখা। যেখানে পাই না, সেখান থেকে হাত গুটিয়ে নিই। মনে মনে আবু সালেহ’র ছড়া ‘ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না / বলা যাবে না কথা / রক্ত দিয়ে পেলাম শালার আজব স্বাধীনতা!’ উচ্চারণ করতে করতে চলে আসি। ‘প্রথম আলো’ উত্তর অ্যামেরিকা যতদিন সে স্বাধীনতা দেবে লিখে যাবো।

শেষে ‘প্রথম আলো’ উত্তর অ্যামেরিকার জন্য শুভকামনা। কাগজটি আরো বেশি করে জনমানুষের কথা বলুক, জনমানুষের হয়ে উঠুক।