https://voiceofpeople24.com/
3612
economy
প্রকাশিত : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১১:৪৫ | আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:০১
বিদেশের মাটি থেকে আমাদের প্রাণের ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকা বিজয়কেতন উড়িয়ে দূরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এই এগিয়ে যাওয়া বাংলা ভাষাভাষী সকল মানুষের এগিয়ে যাওয়া। আমরা বহুদূর থেকে খুশিতে ফেটে পড়তে পড়তে হাততালি দিচ্ছি, গর্বিত হচ্ছি । ইত্যবসরে ‘প্রথম আলো’র সঙ্গে যুক্ত সব্বাইকে অশেষ শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। সেই সঙ্গে যাঁরা পত্রিকাটিকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে চলতে সাহায্য করছেন তাঁদের সকলকে অন্তরের শ্রদ্ধা জানাই। বাংলাভাষা ও সংস্কৃতি চর্চায় আপনাদের নিরলস প্রয়াসে পত্রিকা যেভাবে এগিয়ে চলছে তাতে আগামী দিনের জন্য ভরসায় বুক বাঁধতে সাধ হয়।
আমি পশ্চিমবঙ্গের যে প্রত্যন্ত এলাকায় ঘোরাফেরা করি, যেখানে আমার রুটি রুজি, সেটা মহানগর কলকাতা থেকে ২৩০ কিমি দূরে। না না, তারজন্য নিজেকে প্রান্তিকজন বলে কোথাও দাবি করি না। কোনোদিন কোনও 'কোটা' বা সংরক্ষণ, তাও চাইনি। কবির কথায়, 'এই বেশ ভালো আছি, খাচ্ছি দাচ্ছি ঘুমোচ্ছি… '। পশ্চিমবঙ্গ মানে
কলকাতা নয়, বাংলাদেশ মানে শুধু ঢাকা নয় এই কথাটি জানেন অনেকেই। যাঁরা জানেন, এপার ওপার করেন তাঁরা জানেন, বাংলা ভাষার অপরূপ সৌন্দর্য গ্রামে, মফস্বলে।
বিশ্বে এখন বিশাল বিপুল অলঙ্ঘনীয় দূরত্ব বলে কিছু নেই। পৃথিবীটা ছোট হতে হতে বোকাবাক্স হয়ে এখন হাতের তালুতে বন্দি। তালুর যন্ত্রটি, ভীষণ চালাক। সে কতকিছুই কেড়ে নিল পৃথিবীর! বোকাবাক্সটাও দেখতে দেখতে নীরব হয়ে যাচ্ছে। আর আমরা চালাক যন্ত্রটি মুঠোয় নিয়ে ভার্চ্যুয়াল পৃথিবীতে কদম কদম বাড়িয়ে, কোথায় যে চলেছি, কে জানে! এই পথের শেষ কি এ.আই. নামক যন্ত্রে? সে বিষয়ে বিজ্ঞানীগণ ভাবুন।মানুষ যদি এখন কারো সঙ্গে যোগাযোগ রাখবো বলে ইচ্ছে করে, তবে সে অনায়াসেই যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে। না হলে, কোথায় কোন সুদূর
আমেরিকা, আর কোথায় বাঁকুড়া! অন্তর্জাল ও অ্যান্ড্রয়েড পৃথিবীর মানুষদের এত কাছাকাছি নিয়ে এসেছে যে এখন দূর আর সুদূর ‘উত্তর আমেরিকা' নয়।
আমি যে বাঁকুড়ায় থাকি সেখানে আছে হিমালয়েরও আগের পাহাড়। আমাদের পাহাড়কে প্রকৃতি বানিয়েছে হাতির মতো দেখতে। নাম তার শুশুনিয়া। সেই পাহাড়েরই একটা গুহায় আছে বাংলা হরফে লেখা এক অখণ্ড শিলালিপি। গবেষকদের অনুমান এই শিলালিপিটি খ্রিস্টিয় চতুর্থ শতকের। এখানে আমরা প্রাণের ভাষায় কথা বলি, হাসি, কাঁদি, প্রেম ও ঝগড়া করি। হ্যাঁ, পরকীয়াও হয় বৈকি! 'বাঁকড়ি' উপভাষার বেশ কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। এ ভাষা মান্য বাংলা ভাষা হিসেবে স্বীকৃত নয়। পাঠক্রমে এর স্বীকৃতি নেই। অথচ এইসব উপভাষার ভেতর বাংলা ভাষার যে মাধুর্য পাওয়া যায় তার প্রমাণ আমরা পাই লালনের গানে, আমাদের সমৃদ্ধ বাউল ও লোকগীতিতে। 'বাঁকড়ি', 'চাটগাঁইয়া' এসব উপেক্ষার উপহার পেলেও, চর্যাপদের যুগ থেকে তবুও আমরা বাংলা ভাষার শিকড় আঁকড়ে আছি। এপার বাংলার রাজধানী মহানগরে গেলে শুধু বাংলা ভাষায় কথা বললে অনেক সময় সব কাজ উদ্ধার করা যায় না। বেশ অস্বস্তি হয়। চারপাশে হিন্দির আগ্রাসন, অধিকাংশ বিপণন সংস্থা বা দোকানের নাম বিশুদ্ধ বাংলায় পাওয়া যায় না। অনেক সময় পথ জানার জন্য ভাঙাচোরা ইংরেজি, হিন্দির জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পরিত্রাণ পেতে হয়। বৃদ্ধ হচ্ছি বলে নাকি জানি না ঠিক, বর্তমান প্রজন্মের মুখের ভাষা শুনে এখন হাঁ করে থাকি! মুখে মাছি ঢুকে গেলেও সে ভাষা ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের অ্যান্টেনায় ধরা যায় না। ইংরেজি, বাংলা, হিন্দি, তার সঙ্গে পিএনপিসি, এমআইবি, ডিডিএলজে টাইপের কত মুণ্ডমাল শব্দ! বুঝতে পারি, আমাদের মতো আমাদের ভাষাও ভাঙছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতিতে বিশ্বায়নের প্রভাবে পৃথিবী যখন একটি 'বিশ্বগ্রাম' হিসেবে পরিচয় লাভ করেছে সেখানে মায়ের ভাষার এমত ভাঙনে কষ্ট হয় না যদি লিখি, তাহলে মিথ্যা লেখা হবে। খুব কষ্ট হয়। আর কষ্টের ভেতর গাঢ় অন্ধকারে আসে
আশার ‘প্রথম আলো’। উপভাষা নিয়ে ‘প্রথম আলো’ কিছু করলে, বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হবে।