https://voiceofpeople24.com/

3792

international

ক্রান্তিকাল চেনায় পক্ষ-বিপক্ষ, অতিচালাকদের উদ্ধার বিনাশেই

প্রকাশিত : ০৪ এপ্রিল ২০২৩ ১০:৪৪ | আপডেট : ৩০ নভেম্বর -০০০১ ০০:০০

Ovimotমজলুমের পক্ষ-বিপক্ষ চিনে নেয়ার সময় সহসাই আসে না। একেকটা ক্রান্তিকাল থেকে চিনে নিতে হয় পক্ষ-বিপক্ষ। যারা এটা চিনে নিতে ভুল করেন, তাদের মাশুল দিতে হয়। দেয়ার সে প্রক্রিয়া অদৃশ্য নয় রীতিমত দৃশ্যমান। সিলেক্টিভ প্রতিবাদের মাশুলও ক্রান্তিকালে দিতে হয়। যারা দংশনের গতি-প্রকৃতি দেখে প্রতিবাদ করেন, তাদের জন্য আশীবিষে দংশানোটা জরুরি হয়ে ওঠে। ভিক্ষার বদলে কুত্তা সামলানোর প্রক্রিয়াটিও সমুখে রয়েছে। যারা মুঠোভিক্ষায় ঝোলা কাঁধে ভোলা সেজে পথে নামেন, তাদেরও একসময় কুত্তার দৌড়ানি খেতে হয়। তখন বুঝতে পারবেন কুত্তা সামলানো কতটা জরুরি।

আক্কেল দাঁত হবার সময় ব্যথা হয়। দাঁতটা যে আক্কেল ব্যথাটাই তা জানান দেয়। চালাক এবং বোকা মানুষদের ক্ষেত্রেও তাই। ব্যথা পেলেই আক্কেলটা জাগ্রত হয় তাদের। চালাক ও বোকা মূলত একই প্রজাতির প্রাণী। শুধু নামে ও কাজে কিছুটা পার্থক্য। বোকারা শুরুতেই গোলমাল করে ফেলে। আর চালাকেরা শেষে এসে পাকায় হ-য-ব-র-ল। বোকাদের ব্যথা দিয়ে শুরু হয়, চালাকদের শেষটা হয় ব্যথা দিয়ে। 

চালাকদের মধ্যে যারা অতিচালাক, তাদের বুঝতে আরেকটু বিলম্ব হয়। কারণ, তারা ব্যথা পাবার পরও সুর ধরে ‘মেরেছো কলসির কানা তাই বলে কি প্রেম দেব না’ বলে। তাদের এই প্রণয়ের পরিসমাপ্তি হয় দেবদাসীয়। শেষ পর্যন্ত পৈতৃক প্রাণটাই যাবার উপক্রম হয় তাদের। তাও আবার প্রণয়ীর বদ্ধ দুয়ারের সমুখে। 

কোনো কোনো চালাক হালসময়ে আক্কেল দাঁত উঠার পর্যায়ে আছেন। উত্থানের সেই ব্যথাবোধ যদি তাদের সত্যিকার বোধ ফিরিয়ে আনে তবে ভালো। না হলে তারাও চলে যাবেন অতিচালাকের পর্বে। ধরণটা অনেকটা সাপলুডুর মতন। সিঁড়ি দেখলেই উঠতে নেই। সাপের মুখে পড়তে হতে পারে। অতিচালাকেরা মূলত লোভী হয়, যার ফলে সিঁড়ি পেলেই উঠে পড়তে চায়। 

তেলের ব্যবসায়ীর গল্পটা সঙ্গতই বলতে হয়। সব তেল ব্যবসায়ীর স্বর্গলাভ হলো। স্বর্গ রীতিমত তেলের ব্যবসায়ীর ভীড়ে বাজারের রূপ নিয়েছে। স্বর্গের আরাম আয়েশ দূর কা বাদ ভীড়ে রীতিমত হাঁসফাঁস অবস্থা। এরমধ্যে এক অতিচালাক ব্যবসায়ী বুদ্ধি বার করলেন। রটিয়ে দিলেন নরকে এবার প্রচুর তেলের আমদানি হয়েছে। ব্যবসায়ী বলে কথা। কথায় আছে না, মানুষ অভ্যাসের দাস। ব্যবসাটাও একসময় অভ্যাসে পরিণত হয়। সুতরাং আর যায় কই, সব ব্যবসায়ী হুড়মুড় করে নরকে ছুটলেন। স্বর্গ পুরা খালি। শুধু সেই অতিচালাক ব্যবসায়ী রয়ে গেলেন। কিন্তু ব্যবসায়ী বলে কথা, অভ্যাসের দাস। হিটলারের প্রচারমন্ত্রী যেমন একটা মিথ্যা একশবার বলে একসময় নিজেই বিশ্বাস করতে শুরু করেন। তেমনি সেই ব্যবসায়ীও নিজের ছড়ানো গুজব বেমালুম গুলে খেয়ে ভাবতে লাগলেন, সব ব্যবসায়ী যখন নরকে, তখন নিশ্চয়ই সেখানে তেলের আমদানি হয়েছে। অতএব তিনিও নরকে যাত্রা করলেন। অতিচালাকদের যাত্রাপথ ও গন্তব্য ওই একটাই, নরকে। 

প্রতিটা অমঙ্গলেই মঙ্গল থাকে কিংবা মঙ্গলে অমঙ্গল। ক্রান্তিকালও তার ব্যতিক্রম নয়। এই কালে সব পক্ষ-বিপক্ষ পরিষ্কার হয়। এমন ক্রান্তিকালে যারা পক্ষ-বিপক্ষ চিনতে ভুল করে তাদের মতন হতভাগা আর কেউ নেই। একটা বন্যার গল্প বলে শেষ করি। 

বন্যা মানেই দুর্ভোগ। এক দেশে প্রচণ্ড বন্যা হলো। সব পানিতে ডুবে গেছে। উদ্ধারকারীরা মানুষকে উদ্ধার করছে। এদিকে একজন গোঁ ধরে আছেন তিনি মানুষের সাহায্য নেবেন না ঈশ্বর তাকে উদ্ধার করবেন। পানি বাড়ছে, উদ্ধারকারীরা তাকে উদ্ধার করতে এলো, তিনি না করলেন। পানি আরো বাড়লো। উদ্ধারকারীরা স্পিডবোট নিয়ে এলেন, তিনি তাও না করলেন। পানি আরো বাড়লো। তিনি এবার বাড়ির ছাদে উঠলেন। উদ্ধাকারীরা হেলিকপ্টার নিয়ে এলেন, তিনি তাও না করলেন। বললেন, ঈশ্বর তাকে উদ্ধার করবেন। শেষ পর্যন্ত পানি ছাদ ছাড়ালো, তিনিও ডুবে পটল তুললেন।মৃত্যুর পর ঈশ্বরের সম্মুখীন হলেন সেই ব্যক্তি। ক্ষোভের সাথে ঈশ্বরকে বললেন, আমি তোমার উপর এত ভরসা করলাম তবু তুমি আমাকে উদ্ধার করতে এলে না। ঈশ্বর বললেন, ওরে রামছাগল, প্রথমে উদ্ধাকারী পাঠালাম, তারপর স্পিডবোট, শেষে হেলিকপ্টার তবু তুই উদ্ধার পেলি না। তোর উদ্ধার তো আসলে বিনাশে। আমাদের অতিচালাকদের অবস্থা বোধহয় তাই। ক্রান্তিকালে উদ্ধারের বাড়ানো হাত ফিরিয়ে দিয়ে উল্টোগীত গাওয়াই তাদের নিয়তি। তাদের উদ্ধার সম্ভবত বিনাশেই।